খুলনা, বাংলাদেশ | ২৫শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৯ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৩ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৪২৫

ফের জলাবদ্ধতায় শঙ্কায় ডুমুরিয়া অঞ্চল, শৈলমারি রেগুলেটরের জলকপাট বন্ধ

ডুমুরিয়া প্রতিনিধি

আবারো জলাবদ্ধতায় পড়তে যাচ্ছে ডুমুরিয়া অঞ্চল। পানি নিষ্কাশনের পথ আটকে পড়ায় বৃষ্টির পানিতে ক্রমান্বয় প্লাবিত হচ্ছে ‌নিম্নাঞ্চল। শৈলমারি ১০ ভেন্ট রেগুলেটরের অবস্থাও বেহাল। পলি পড়ে সবগুলো জলকপাট অচল হয়ে পড়েছে। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশন চলমান থাকলেও বৃহৎ এই অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে আশার আলো একটুও দেখা যাচ্ছে না।

জানা যায়, বিলডাকাতিয়াসহ ডুমুরিয়ার বিশাল একটি অংশের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ শৈলমারী ১০ ভেন্ট রেগুলেটর। পলি পড়ে যার সব জলকপাটগুলো অচল হয়ে আছে। গত ৪ বছর ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ড বৃষ্টির মৌসুম এলেই তড়িঘড়ি করে বিশেষ জরুরি প্রকল্পের মাধ্যমে গেটের মুখের পলি অপসারণ করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে আসছে। কিন্তু স্থায়ীভাবে কোন সুরহা হচ্ছে না। গত বছর বৃষ্টির মৌসুমের শেষ দিকে অতি ভারী বর্ষণে বিল ডাকাতিয়াসহ ডুমুরিয়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ভয়াবহভাবে প্লাবিত হয়ে পড়ে। ঘর-বাড়ি তলিয়ে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এরপর স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন, বিএডিসি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের যৌথ প্রচেষ্টায় পানি নিষ্কাশনের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রায় ৩মাস লাগে মানুষের ঘর-বাড়ি থেকে পানি নামতে। আবারো সেই ভয়াবহ দৃশ্য হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে যদিও শৈলমারি রেগুলেটরে পৌনে ৩ কোটি টাকা বরাদ্দে ২টি ৩৫ কিউসেক সম্পন্ন পাম্প চালু হয়েছে। প্রতি সেকেন্ডে দুই পাম্পে ২ হাজার লিটার পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে। কিন্তু ৩৫ হাজার হেক্টেরের বৃহৎ এই অঞ্চলের পানি পাম্প দিয়ে নিষ্কাশন কাজ সম্পন্ন করা কষ্টসাধ্য।

এ বিষয়ে উপজেলা বিল কামিটির সভাপতি অধ্যাঃ জিএম আমান উল্লাহ বলেন, ডুমুরিয়া-ফুলতার জলাবদ্ধতা নিরসনের একটি মাত্র পথ শৈলমারি রেগুলেটর। প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার হেক্টর জমির পানি নিষ্কাশন হয় এই গেট দিয়ে। এ অঞ্চলে ব্যাপক জনবসতি এবং ফসলি জমি রয়েছে। গত বছর জলাবদ্ধতা নিরসনে স্বক্ষম হলেও এবার যে পরিস্থিতি, তাতে বোঝা যাচ্ছে ভয়াবহ রূপ নিতে যাচ্ছে জলাবদ্ধতার। পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশন মানে আমরা প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করছি। অবিলম্বে রেগুলেটের সিলটেড হওয়া জলকপাটগুলো সচল করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতি তিনি জোর দাবি জানিয়েছেন।

ডুমুরিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর আলম জানান, গত বছর ভয়াবহ পানিবন্দি ছিলো ডুমুরিয়ার মানুষ। এবছর পানি নিষ্কাশনের জন্য আগাম ২টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প চালু হয়েছে। তবে বৃহত এই অঞ্চলের পানি পাম্প দিয়ে নিষ্কাশন সম্ভব না। দ্রুত গেটের কপাট সচল করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা দরকার। না হলে আবারো পানিবন্দি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

খুলনা-৫ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপি নেতা মোল্যা মোশাররফ হোসেন মফিজ বলেন, শৈলমারি নদী সিলডেট হওয়ার কারণে গত বছর জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে ডুমুরিয়ার বিশেষ করে উত্তরাঞ্চল। এসব অঞ্চলের মানুষদের দীর্ঘদিন পানিবন্দি জীবন যাপন করতে হয়েছে। পরবর্তিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুশিলসমাজ, সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের মানুষ এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সহযোগিতায় পানি নিরসন করতে আমরা সক্ষম হই। বর্তমানে বাহির পাশের চেয়ে ভিতরে অনেক নিচু। যার কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। দ্রুত গেটের মুখসহ নদী খনন করে এলাকার জলাবদ্ধতা স্থায়ীভাবে নিরসনে সংশ্লিষ্ট তদপ্তরসহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জোর দাবী জানিয়েছেন তিনি।

খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের-২ নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম জানান, পানি নিষ্কাশনে শৈলমারি রেগুলেটের ৩৫ কেউসেকের দুটি পাম্প চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি গেটের মুখে পলি অপসারণেও আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। গেটের ভিতরে এবং বাহিরের পানির যে স্তরটি রয়েছে অন্তত দেড় ফুট ডিফারেন্স প্রয়োজন। কারণ ভিতরে পানির চাপ বেশি না হলে বাহিরের পলি অপসারণ করা সম্ভব হবে না। আমরা জরুরীভাবে কাজ করার জন্য সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষায় আছি। পানির পর্যাপ্ত চাপ হলেই কাজ শুরু হবে।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!